Header Ads

ব্ল্যাক হোল (Black Hole) নিয়ে আশ্চর্য সব তথ্য


পৃথিবীর মানুষের কাছে  এক বিস্ময়ের ব্ল্যাকহোলব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি স্থান জুড়ে রয়েছে, যা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে কিন্তু এর ভর এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই বেশি 
যে তার হাত থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ ও (আলোর রশ্মি)।
প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ‘ব্ল্যাক হোল’। বিজ্ঞানীরা মনে  করেন, কোনো বিশালাকারের নক্ষত্র নিভে গিয়ে সংকুচিত হতে হতে যখন ক্ষুদ্রতম অবস্থায় পরিণত হয় তখনই ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি হয়। আর এটা এত বেশি ঘনত্বের হয় যে পুরো নক্ষত্রটির ভরের সমান হয়ে যায় আর ক্ষুদ্রতম অবস্থাটি ধরে নেওয়া যায় ছোট দানার মতো। এমনকি ওই নক্ষত্রের অভিকর্ষজ বলও ধারণ করতে পারে এটি।




যদি কোনো বস্তু ওই ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের ইভেন্ট ঘটনা দিগন্তে প্রবেশ করে তবে এটি আর কখনোই ফিরে আসতে পারে না। বলা যায় ঘটনা দিগন্ত থেকেই ব্ল্যাক হোলের শুরু। বিভিন্ন গবেষণার পরও এই মহাজাগতিক ঘটনা এখনো রহস্যে আবৃত। চলুন এই রহস্যময় ব্ল্যাক হোল নিয়ে কিছু আশ্চর্য তথ্য জেনে নিই।




🌟 মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোলের অবস্থান ঃ

আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বিশাল ব্ল্যাক হোল। এরকম ব্ল্যাক হোল বেশীরভাগ গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই  থাকে। এদের বলে 'অতিভর কৃষ্ণগহ্বর' (Supermassive Black Hole)। আমরা গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৬০০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছি। এছাড়া আরও অনেক ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
মহাকাশবিদগণ ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছেন অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট একটি কৃষ্ণগহ্বরের যার ভর আমাদের সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন গুন বেশি এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার মাঝখানে অবস্থিত।




🌟  ব্ল্যাক হোলের ধারণা ও আবিষ্কার ঃ

ব্ল্যাক হোল নিয়ে এর আগে বিজ্ঞানীদের তেমন ধারণা ছিলো না। সর্বপ্রথম  ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) "ব্ল্যাকহোল হলো বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"- এ ধারণা প্রদান করেন  ।
১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস একই মতবাদ প্রদান করেন তাঁর ‘Exposition du systeme du Monde‘ বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে।
১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার “জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব ” দিয়ে ধারণা করেন ব্ল্যাকহোল থাকা সম্ভব। 
জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান, যেকোন তারকা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে।
অনেকদিন ধরে চলা বিভিন্ন ধারণাগুলোকে এক জায়গায় এনে, পদার্থবিদ জন হুইলার ১৯৬৭ সালে প্রথম এই ধারণাকে ‘ব্ল্যাক হোল’ নামকরণ করেন।

আর ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারীরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাকহোল আছে। পরবর্তীতে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো  একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যা মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটা বড় ঘটনা। বিজ্ঞানীদের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বৃত্তাকার কালো আভার চারদিকে এক উজ্জ্বল আগুনের বলয়।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসানো ( এ্যান্টার্কটিকা, স্পেন ও চিলি) ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের এক নেটওয়ার্ক দিয়ে এই ছবি তোলা সম্ভব হয়। এর আগে কোন ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা যায়নি। কারণ একক কোন টেলিস্কোপের এর ছবি তোলার ক্ষমতা নেই। M87 নামে একটি বহুদূরবর্তী গ্যালাক্সির মধ্যে এটি পাওয়া গেছে।




🌟 ব্ল্যাক হোলের কবলে পড়লে কী হবে 😲

কাউকে বাষ্পাকারে নুডলসের মতো নিজের দিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা আছে ব্ল্যাক হোলের। এই অবস্থাকে ‘স্প্যাগেটিফিকেশন’ বলা হয়। এই মুহূর্তে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে আপনার মাথার চেয়ে পায়ের পাতা বেশি নিকটে। তাই আপনার মাথার চেয়ে পায়ের পাতাগুলোকে তুলনামূলক বেশি আকর্ষণ করছে পৃথিবীর কেন্দ্র।

ধরেন আপনি ব্ল্যাক হোলে পড়ে গেলেন! তখন তীব্র আকর্ষণের তুলনামূলক এই ঘটনাটিও আপনার  বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে। এভাবে আপনার পা যদি ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রের দিকে থাকে, তবে মাথা থেকে পায়ের ওপর মাধ্যাকর্ষণ বেশি কাজ করতে থাকবে। এভাবে ব্ল্যাক হোল যত কাছে আপনাকে টানবে ততই আকর্ষণের প্রভাব এবং তারতম্য আপনার মাথা ও পায়ের ওপর কাজ করতে থাকবে। অর্থাৎ আপনার মাথার চেয়ে আপনার পায়ের পাতা আরও দ্রুত ব্ল্যাক হোলের দিকে এগোতে শুরু করলে পরিস্থিতিটা কীরকম হবে! কল্পনায় আপনি যেমন চুইংগামের মতো দীর্ঘ হয়ে বাষ্পের মতো কণায় কণায় বিভক্ত হয়ে যাচ্ছেন, তেমনটিকেই বলা হয় ‘স্প্যাগেটিফিকেশন’।




🌟 ব্ল্যাকহোলের ধরণ ঃ

ব্ল্যাকহোল ছোট বড় হতে পারে।  সবচেয়ে বৃহৎ ব্ল্যাকহোলকে বলা হয় “সুপারমেসিভ”। কৃষ্ণগহবরকে ভাগ করা হয় তার মাঝে থাকা ভর, আধান, কৌণিক ভরবেগের উপর ভিত্তি করে। ভরের উপর ভিত্তি করে ব্ল্যাকহোল ৪ ধরনের। যেমন-

১. Super Massive Blackhole (সুপার মেসিভ ব্ল্যাকহোল)

২. Intermediate Blackhole (ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাকহোল)

৩. Micro Blackhole (মাইক্রো ব্ল্যাকহোল)

৪. Steller Blackhole (স্টেলার ব্ল্যাকহোল)

🌟 ব্ল্যাকহোল কি পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে ?

ব্ল্যাকহোল মহাশুন্যের এতটা কাছে ভ্রমণ করে না যে, তা কোন তারকা, চাঁদ বা গ্রহকে তার শিকার বানাতে পারে। আর পৃথিবীও কোন দিন ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পতিত হবে না। কারণ, কোন ব্ল্যাকহোলই কিন্তু পৃথিবীর সৌরজগতের এতটা কাছাকাছি নয়। আমরা গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৬০০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছি।


🌟 কৃষ্ণগহ্বর তথ্য প্যারাডক্স ঃ 

ব্ল্যাকহোল নিয়ে একটি বড় রহস্যের সমাধান হয়নি। ব্ল্যাক হোল তার জীবনকালে অনেক কিছুকে গ্রাস করেছে। আমরা যদি এদের 'তথ্য' বলি তাহলে হকিং বিকিরণের মাধ্যমে সে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর সেই তথ্যগুলো কোথায় যায়? মনে হয় যে সেই সকলই মহাবিশ্ব থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু পদার্থবিদ্যার প্রথম নিয়ম হল, মহাবিশ্ব থেকে তথ্য হারাতে পারে না।  এখানে একটি ধাঁধার সৃষ্টি হয়। এটাই হল হকিং এর বিখ্যাত 'Black Hole Information paradox'। এই ধাঁধার নিশ্চিত সমাধান আজও হয়নি এবং এই নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে।

🌟 ব্ল্যাক হোল নিয়ে হকিং তত্ত্ব ঃ

পূর্বে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, কোনো কিছুর পক্ষেই ব্ল্যাক হোলের তীব্র মহাকর্ষ শক্তি এড়ানো সম্ভব নয়। এমনকি, ব্ল্যাক হোল থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে ব্ল্যাক হোল থাকলেও তা থেকে কোন তথ্য জানা অসম্ভব। কিন্তু কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব ব্যবহার করে  হকিং দেখিয়ে দিয়েছিলেন, ব্ল্যাক হোল থেকে বিকিরণ বেরিয়ে আসে। ব্ল্যাক হোল যত ছোট হতে থাকে, তত তার বিকিরণের তাপমাত্রা শক্তিশালী হয়। এই বিকিরণের সূত্রেই ব্ল্যাক হোল তার ভর হারায় এবং ক্রমশ ভর কমতে কমতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোল মহাশূন্যে মিলিয়ে যায়। এই তত্ত্বকেই বলা হয় হকিং বিকিরণ। বিজ্ঞানের এই জটিল তত্ত্বগুলোই ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ নামের বইয়ে প্রকাশ করেন হকিং।

🌟 ব্ল্যাক হোল নিয়ে কিছু সূত্র ও থিউরি (ছবি) ঃ








ভিডিও  :


সেদিন খুব বেশী দূরে নয়, যেদিন আশ্চর্য রহস্যের আঁধার এই ব্ল্যাক হোল নিয়ে আমাদের সব কৌতূহলের অনুসন্ধান সম্ভব ঘটবে। ✌

কোন মন্তব্য নেই

sololos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.