উপগ্রহ কী
উপগ্রহ হচ্ছে এমন একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যা তার নিজস্ব কক্ষপথে কোন গ্রহের চারদিকে ঘুরে। উপগ্রহ মূলত দুই প্রকার। একটি হলো প্রাকৃতিক উপগ্রহ, অন্যটি কৃত্রিম উপগ্রহ। প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলতে সাধারণত চন্দ্র কেই বুঝি আমরা। তবে কোন গ্রহ, বামন গ্রহ বা ক্ষুদ্র গ্রহ-এর সাথে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান বস্তুগুলোকে প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে যেসকল উপগ্রহ কৃত্রিমভাবে কোন গ্রহের কক্ষপথে স্থাপন করা হয় তাকে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের 'বঙ্গবন্ধু-১' স্যাটেলাইট মহাশূণ্যে পাঠানো হয়েছে তা একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। মানব তৈরি অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’ উৎক্ষেপণ করে।
এদের ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। কোনোটি পৃথিবীর ছবি সংগ্রহ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে তথ্য প্রদানে সহায়তা করছে। কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ অন্যান্য গ্রহ, সূর্য, কৃষ্ণবিবর বা দূরবর্তী ছায়াপথ এর ছবি সংগ্রহ করছে। এসব তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা অন্যান্য গ্রহ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে তথ্য জানতে পারছে। এছাড়াও কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে যারা মূলত যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন: টিভি সিগন্যাল, বিশ্বজুড়ে ফোন কল এর সংযোগ স্থাপন, জিপিএস সিস্টেম এর কাজে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের সৌর জগতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬২ টি উপগ্রহ গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, ৪ টি উপগ্রহ ঘূর্ণায়মান আছে বামন গ্রহ-কে কেন্দ্র করে এবং অন্যগুলো ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু-কে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান আছে। এছাড়াও অন্যান্য তারা এবং তাদের গ্রহদেরও উপগ্রহ রয়েছে।
সৌরজগতের ৮টি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যা ও নাম নিম্নে দেওয়া হলো-
১/ পৃথিবী (১টি) - চাঁদ
২/ মঙ্গল (২) - ফোবোস ও ডিমোস
৩/ বৃহস্পতি (৭৯) - মেটিস (Metis), অ্যাড্রাস্টিয়া (Adrastea), অ্যামালথিয়া (Amalthea), থীবী (Thebe), আইয়ো (Io), ইউরোপা (Europa), গ্যানিমেড (Ganymede), ক্যালিস্টো (Callisto), থেমিস্টো (Themisto), লেডা (Leda),হিমালিয়া (Himalia), লিসিথিয়া (Lysithea),এলারা (Elara), ডিয়া, কার্পো (Carpo), এস/২০০৩ জে ১২ (S/2003 J 12), ইউপোরি (Euporie), এস/২০০৩ জে ৩ (S/2003 J 3), এস/২০০৩ জে ১৮ (S/2003 J 18), থেলজিনো (Thelxinoe), ইউয়ান্থ (Euanthe), হেলিক (Helike), ওর্থোসাই (Orhtosie), লোকাস্ট (Locaste), এস/২০০৩ জে ১৬ (S/2003 J 16), প্র্যাক্সিডিক (Praxidike), হার্পালিক (Harpalyke), নেম (Mneme), হারমিপ (Hermippe), থাইয়োন (Thyone), আনাক (Anake), হার্স (Herse), অ্যাল্টন (Altne) ইত্যাদি ।
বৃহষ্পতির সবচেয়ে বড় চারটি উপগ্রহ হলো আইয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমেড এবং ক্যালিস্টো, এদেরকে গ্যালিলীয় উপগ্রহ বলা হয়ে থাকে আবিষ্কারকের নামানুসারে।
৪/ শনি (৮২) - টাইটান (বৃহৎ), রিয়া, ইয়াপেটাস, ডায়োন, টেথিস, এনসেলাডাস, মাইমাস, হাইপেরিয়ন, ফোব ইত্যাদি ।
৫/ ইউরেনাস (২৭) - টাইটানিয়া, ওবেরন, আমব্রিয়েল, এরিয়েল, মিরান্ডা ইত্যাদি।
৬ / নেপচুন (১৪) - ন্যায়আড (Naiad), থ্যালাসা (Thalassa), ডেস্পিনা (Despina), গ্যালাটিয়া (Galatea), ল্যারিসা (Larissa), প্রোটিয়াস (Proteus)। ট্রাইটন (Triton), নেরিড (Nereid), হেলিমিড (Helimede), স্যাও (Sao), ল্যাওমেডিয়া (Laomedia), নেসো (Nesso), স্যামাথ (Psamathe)
এস/২০০৪ এন১ (S/2004 N1)।
কোন মন্তব্য নেই